ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক: ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কোচিং সেন্টার মালিকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. জোবায়দুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ওই নালিশি মামলা করেন।

জোবায়দুর রহমানের আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে চাটঁগার টিভিকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পল্টন থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জোবায়দুর রহমান মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র মালিক।

মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও আসামি হিসেবে আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও এসআই আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পরের তিনজন সিআইডিতে চাকরি করলেও তারা এখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, জোবায়দুর রহমান সপরিবারে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলিবাগে থাকেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় তারা জোবায়দুর রহমানকে তুলে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাসার বিভিন্ন মালামাল লুট করে। তাঁকে ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হলেও তাঁর বিষয়ে পরিবারকে জানায়নি সিআইডি।

মামলার আরজিতে বলা হয়, সিআইডি কার্যালয়ে জোবায়দুরের দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে ওই ছবি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে জোবায়দুরের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দেওয়া না হলে তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ও তাঁর স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।

জোবায়দুরের পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদী হাসানের গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসআই আতিকুর রহমান টাকা দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তা তদারকি করতেন। টাকা নেওয়া–সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড জোবায়দুরের কাছে আছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব ৬ মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

জোবায়দুরকে রিমান্ডে নিয়ে পেটালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে ৪৩ দিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী জোবায়দুর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ও এজাহারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে।

আজ বুধবার এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের আগস্টে সিআইডি প্রধান হন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট মোহাম্মদ আলীকে সিআইডি থেকে  পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।

পাঠক প্রিয়