তারা বানু, মহানগর প্রতিনিধি: দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন, সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পশ্চিম এলাহাবাদ আহমদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসা আজ ১২ই জুন ২০২৫ইং তারিখে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অভিযাত্রায় যুক্ত হলো একটি চতুর্থতলা বিশিষ্ট আধুনিক একাডেমিক ভবন, যা আলহামদুলিল্লাহ মিলাদ, ক্বিয়াম ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।
বহু বছর ধরে ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার ও সমাজের নৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসা এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার একটি শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক শিক্ষা পরিকাঠামো, পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে নির্মিত ভবনটি শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়—বরং এটি মাদ্রাসার সামগ্রিক অগ্রগতির একটি দৃশ্যমান নিদর্শন।
আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী সাইফুল করিম। প্রধান অতিথি ফিতা কেটে ও দোয়ার মাধ্যমে ভবনটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম আলকাদেরি, গভর্নিং বডির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য এস.এম. হাবিবুল ওয়াহেদ টিপু, এবং শিক্ষক প্রতিনিধি হাফেজ মুহাম্মদ ইব্রাহীম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ রাশেদ, গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য আবু ছৈয়দ ও মীর আহমদ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আবু তৈয়ব, জি কে নাজিম, উপজেলা ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা আমজাদ হোসেন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণ।
উদ্বোধনের পরপরই অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র মিলাদ মাহফিল ও ক্বিয়াম, যাতে অংশগ্রহণ করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দসহ শিক্ষার্থী ও এলাকার ধর্মপ্রাণ জনতা। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস, যিনি দেশ, জাতি, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, সমাজের শান্তি ও মাদ্রাসার উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য দোয়া করেন। মোনাজাতে বিশেষভাবে দোয়া করা হয় যেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা নৈতিক, মানবিক ও জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে সমাজে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। সকলের মধ্যে এক আবেগঘন ও আত্মিক পরিবেশ বিরাজ করে এ সময়।
প্রধান অতিথি সাইফুল করিম বলেন, “পশ্চিম এলাহাবাদ আহমদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেভাবে নিজেকে আধুনিকীকরণে এগিয়ে নিচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই চারতলা একাডেমিক ভবনটি শিক্ষার প্রসার এবং পাঠদানের পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের প্রজন্ম এখানে মানসম্মত দ্বীনি ও সাধারণ শিক্ষায় আলোকিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠান শুধু বইয়ের শিক্ষা নয়, মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনের কারখানা হয়ে উঠতে পারে—যদি সেই প্রতিষ্ঠানে থাকে সদিচ্ছা, সুশাসন ও পরিকাঠামোগত সমৃদ্ধি। আমি বিশ্বাস করি, এই মাদ্রাসা সে লক্ষ্যেই অগ্রসর হচ্ছে।” পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, আবেগঘন এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ। অতিথিরা তাদের বক্তব্যে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষকবৃন্দ, দাতা সদস্য এবং এলাকার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাদ্রাসা আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার পথিকৃত হয়ে উঠবে।
এই ভবন শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি আশার প্রতীক—যা আগামী দিনের আলোকিত সমাজ গঠনে ভিত্তি তৈরি করবে। পশ্চিম এলাহাবাদ আহমদিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসা তার ঐতিহ্যের আলোকে আধুনিকতার পথে যাত্রা শুরু করেছে, আর এই উদ্বোধনী দিন সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।