
এস এম সরওয়ার :পবিত্র ঈদে সকল কর্মজীবী আশায় থাকেন বেতন-বোনাসের টাকায় প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর। কিন্তু প্রতিবারই বেতন-বোনাসের অনিশ্চয়তায় অসন্তোষে সড়কে নামতে বাধ্য হন অনেক পোশাকশ্রমিক। দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী এ শিল্পে এবারও চট্টগ্রামের ৪৪ কারখানায় এমন শঙ্কা রয়েছে। এতে ২১ হাজার ৪৮৩ কর্মজীবী আছেন টেনশনে। তবে বিষয়টি নিয়ে তৎপর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় ৮টি, সিইপিজেডে ৬টি, ডবলমুরিংয়ে ৬টি, পাহাড়তলীতে ৫টি, কেইপিজেডে ৩টি, বায়েজিদে ৩টি, হালিশহরে ২টি, আকবরশাহে ২টি, খুলশী নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় ২টি, চাকতাইয়ে ২টি এবং কর্ণফুলী, বোয়ালখালী, পটিয়া, হাটহাজারী ও পাঁচলাইশে ১টি করে কারখানায় কাজের অর্ডার কম থাকায় ঈদের আগে বেতন ও বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৮৩৩ জন এবং পুরুষের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০ জন। এগুলোর মধ্যে অর্ডার কম থাকাসহ আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা রয়েছে ছয়টি কারখানায়।
তথ্য যাচাই করে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, অর্ডার কম থাকাসহ বায়ারদের শিপমেন্টের ডিলে (বিলম্ব), পেমেন্ট না আসার কারণে আর্থিক কিছু টানাপোড়েন আছে। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ঈদের বোনাস বেতনের সঙ্গে দিতে না পারলেও অধিকাংশ কারখানায় আলাদাভাবে দেওয়ার। আর কিছু কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন অর্ধেক বেতন বোনাসের সঙ্গে পরিশোধ করবে।
এর ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে কিছু মালিকের কথায়। যেমন এ্যারো জিন্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে পাহাড়তলীর একটি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ উল করিম। বেতন-বোনাস নিয়ে জানতে চাইলে তিনি চাটগাঁর টিভি’কে বলেন, ‘অর্ডার ভালো নাই। এ্যারো জিন্স ফ্যাক্টরি চলে না। বন্ধ।’
বর্তমানে কতজন শ্রমিক আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কারখানা বন্ধ থাকায় বর্তমানে কোনো শ্রমিক কাজ করে না। তবে তথ্য যাচাই করে জানা গেছে, কারখানাটিতে বর্তমানে পুরুষ ৭০ জন এবং নারী ৩৮০ জন কর্মরত রয়েছেন।
এ নিয়ে কথা হলে বিজিএমইএ প্রশাসক কমিটির সদস্য ও ক্লিফটন ফ্যাশন লিমিটেডের পরিচালক মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘একটা পট পরিবর্তনের পর কিছু আন্দোলন শুরু হওয়ায় দেশের সুনামে কিছুটা আঘাত লেগেছিল। এছাড়া ঢাকার শ্রমিক আন্দোলনে কিছু বায়ার ডিস্টার্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে অর্ডার আসছে। সবাই হয়তো সেটি পায়নি। তাই তারা কিছুটা ব্যাকফুটে আছেন। তবে এটি নিশ্চিত যে, কারখানা মালিকরা কখনো বেতন-বোনাস বকেয়া রাখতে চান না। সবাই চান ঈদের আগে অন্তত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে তাদের ঈদের ছুটি দিতে। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা জেনেছি। আমরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যেন শ্রমিকরা কোনোভাবে অসন্তুষ্ট না হয়।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ইন্টিলিজেন্স সেল থেকে তথ্য পেয়ে আমরাও কাজ করছি। মালিকপক্ষসহ শ্রমিকদের সঙ্গেও আমরা কথা বলছি। পাশাপাশি বিজিএমইএ এবং শ্রম দপ্তরও মালিকপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আশা করছি, কোনো সমস্যা হবে না।’